একুশ শতকের বৈশ্বিক জিহাদ -হাফেজ মাওলানা হানজালা বিন মুত্তালিব
আজকের অশান্ত পৃথিবীর বেদনাময় যাত্রা সূচিত হয়েছে গত শতকের তৃতীয় দশকের শুরুতেই। একদিকে ফিলিস্তিনে ইহুদি কলোনির স্থাপন, অন্যদিকে তুরকি ওসমানী খেলাফতের দুঃখজনক পতন— ডেকে আনে অশান্তি ও রক্তপাতের দীর্ঘমেয়াদী কালোযুগ। এরপর প্রযুক্তিতে উৎকর্ষ এসেছে। জীবনের ভোগ-উপকরণ বহুগুণ বেড়েছে। কিন্তু মানবতা ও মানবিকতা ধ্বংস হয়েছে। নীতি-নৈতিকতার অবসান ঘটেছে। প্রকৃত শান্তি হয়ে পড়েছে অধরা, রূপকথার কল্পকাহিনী।
দীর্ঘ চৌদ্দ শতাব্দী যাবৎ যে জাতি ছিল মানবতার কল্যাণ নেতৃত্বের একচ্ছত্র অধিপতি। যারা ছিল পৃথিবীর মহিমান্বিত শিক্ষক। অপর জাতিবর্গ ছিল গর্বিত ছাত্র। কালের নির্দয় ঝাপটায় সেই শাসকগোষ্ঠী পরিণত হল শাসিত শোষিত শ্রেণীতে। শিক্ষক হল ছাত্র। পৃথিবীর এই অবাককরা ছন্দপতনে মুসলিমগণই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; তা বলার অপেক্ষা রাখে না। খিলাফাহ ব্যবস্থার পতনের মধ্য দিয়ে মুসলিম দেশগুলোতে জেঁকে বসে এক নতুন ধরনের শাসন ব্যবস্থা। যা গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার যুগপৎ মেলবন্ধনে জন্ম নেয়া প্রবৃত্তিবাদী জীবন ও শাসনব্যবস্থা।
ইসলামের এই মহাদুর্দিনে দিকে দিকে বিপ্লবের আওয়াজ উচ্চকিত হল। নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, ও সামরিক— সর্বক্ষেত্রেই এক অভূতপূর্ব জাগরণ সূচিত হল। বহুদেশেই দখলদার শত্রুর বিরুদ্ধে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মুসলিমগণ অস্ত্রহাতে প্রতিরোধ গড়ে তুললেন। মরো, আফগানিস্তানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন জনপদের মুসলিমগণ আল্লাহপ্রদত্ত বিজয়ে ধন্য হয়েছেন। তবে বেশিরভাগ মুসলিম দেশ, যেগুলিতে কুফরি শাসনব্যবস্থা জেঁকে বসেছে বটে। কিন্তু প্রত্যক্ষ ভিনদেশী সামরিক আগ্রাসন নেই। সেসব দেশের ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠাকামীরা চিন্তার বিভাজনে আটকে আছেন। একশ্রেণী মনে করছেন, গণতন্ত্রের পথে ইসলামের প্রত্যাবর্তন সূচিত হবে। যদিও এই গণতন্ত্রের পথেই ইসলামের পতন ঘটেছিল। আবার কেউ ভাবছেন, গণতন্ত্রের অভিজ্ঞতা বড়ই তিক্ত। তাই এই প্রবঞ্চনার পথ ছেড়ে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ইসলামের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনতে হবে।
তবে বাস্তবতা হল, বুদ্ধিবৃত্তিক বলুন আর সামরিক; দু’ দলের কেউই কোনোটাতে পূর্ণ মাত্রায় উত্তীর্ণ হতে পারে নি এখনো।প্রয়োজন এখন নিষ্কম্প ঈমানের অনির্বাণ দ্যুতি, নববী চরিত্রের মধুময় মহিমা, দ্বীনের ইলম ও যুগের জ্ঞানে সমৃদ্ধি এবং সমরশক্তিতে অগ্রসর একউম্মাহ।নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য অতি সন্নিকটে