দুশ্চরিত্র মহিলা ও বনী ইসরাঈলের ধার্মিক ব্যাক্তি জুরায়েজ
বনী ইসরাঈলের একজন ইবাদতকার লোক, যার নাম ছিল জুরায়েজ। একটি ইবাদতখানা তৈরি করে তিনি এখানে ইবাদত করতেন। জুরায়জের ইবাদতের কথা সমগ্র বনী ইসরাঈলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তাদেরই একজন দুষ্টু মহিলা বলে যে, “তোমরা চাইলে আমি এই ব্যাক্তিকে পথভ্রষ্ট করে দিতে পারি, তাকে আমার সাথে ব্যাভিচারে লিপ্ত করতে পারি”। কয়েকজন দুষ্টু লোক বলল, “ঠিক আছে, আমরা তাই চাই, দেখি তুমি কেমন করে তাকে ব্যাভিচারে লিপ্ত করতে পারো।” তারপর সেই মহিলা জুরায়েজের ইবাদতখানার দিকে চলে যায়। সেখানে দীর্ঘদিন অবস্থান করে এবং ফিরে এসে যথা সময়ে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করে।
লোকজন তাকে জিজ্ঞেস করল, “এটি তার সন্তান?” সে বলল, “জুরায়েজের”। সে সমাজে ব্যাভিচার অত্যান্ত নিকৃষ্ট এবং কঠিনতম শাস্তিযোগ্য অপরাধ ছিলো। তাই লোকেরা ক্ষেপে যায় এবং জুরায়েজকে তার ইবাদত খানার বাইরে ডাকতে থাকে। জুরায়েজ তখন ইবাদতে মগ্ন ছিলো তাই তাদের ডাকাডাকিতে কর্নপাত করলো না। তখন লোকেরা তাকে টেনে নামায়। এমনকি তারা জুরায়েজকে গালাগালি করে, প্রহার করে তার ইবাদত খানাটি ভেঙ্গে ফেলে।
তখন জুরায়েজ বললেন, “ব্যাপার কি? আমি তোমাদেএ কি করলাম? তোমরা আমার সাথে এমন করছো কেন?” তারা বলল, “তুমি এ স্ত্রী লোকটির সাথে ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়েছ। ফলে সে একটি ছেলে প্রসব করেছে। আর এখন কিছুই না জানার ভাব করছো।” জুরায়েজ বললেন, “সে ছেলেটি কোথায়? তাকে নিয়ে আসো” তখন যুরায়েজ নামায আদায় করলেন এবং আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন। তারপর ছেলেটির নিকট গিয়ে আগুল দিয়ে খোঁচা মেরে বললেন, “হে বালক আল্লাহর কসম, তোমার জন্মদাতা কে?” সে উত্তর দিলো, “আমি অমুক রাখালের পুত্র।”
সদ্য জন্মানো বাচ্চার মুখে তার আসল পিতার পরিচয় জানতে পেরে লোকেরা সেই মহিলার উপর চড়াও হয়। তখন মহিলা স্বীকার করে যে, সে জুরায়েজের নিকট এসে নিজেকে তার কাছে পেশ করে এবং জুরায়েজকে ব্যাভিচারে আহবান করে। কিন্তু জুরায়েজ সেদিকে তাকিয়েও দেখে না। জুরায়েজের ইবাদতখানার পাশে একজন রাখাল বকরি চরাতো। মহিলা তার সাথেই ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়। এবং যথাসময়ে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করে।
এটা শুনে লোকেরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে জুরায়েজের দিকে অগ্রসর হয় এবং তাকে চুমো খেতে থাকে। তারা বলে, “আমরা সোনা দিয়ে আপনার ইবাদতখানা তৈরি করে দেব।” যুরায়েজ বললেন, “না, তা আমার দরকার নেই। পূর্বে যেমন ছিল তেমন করে মাটি দিয়েই তৈরি করে দাও।”
[বিঃদ্রঃ কয়েক হাজার বছর পূর্বের ঘটনা বিভিন্ন সূত্রে বিভিন্নভাবে বর্নিত হলেও ঘটনা প্রবাহ এবং সারকথা সকল বর্ননাতেই প্রায় একই। যথাসম্ভব নির্ভরযোগ্য সুত্র হতে ঘটনাপ্রবাহ গ্রহন করার চেষ্টা করেছি। আল্লাহ মহাজ্ঞানী। ভুলত্রুটির জন্যে ক্ষমাপ্রার্থনা করি।]
[তথ্যসূত্রঃ আল্লামা ইসমাইল ইবনে কাসির (রঃ) এর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থ অবলম্বনে সংকলিত]