পৃথিবিতে প্রথম মুর্তি পুজা যেভাবে শুরু হলো
ইবনে আব্বাস (রাঃ) সূত্রে ইমাম বুখারী (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস অনুযায়ী এটা ধারনা করা হয় যে, (ওয়াদ, সুওয়া, যাগৃছ ইত্যাদি) এরা হলো হযরত নূহ (আঃ) এর সম্প্রদায়ের কয়েকজন পুণ্যবান ব্যক্তির নাম। তারা ছিলেন ভালোদের ভালো সেরাদের সেরা। তাদের কর্মের মাধ্যমে তারা সেসময় সমাজের সকল মানুষের অন্তরে জায়গা করে নিয়েছিলেন। মানুষ তো আর চীরদিন বেচে থাকে না তাই তারাও আয়ু শেষে একে একে মারা যায়। তাদের মৃত্যুতে সমাজের সবাই অনেক ব্যাথিত হয়ে যায়। কেননা ভালো মানুষেরা মানুষের অন্তরে যায়গা করে নেয়। আর শয়তান সেই ব্যাথিত অন্তরের সুযোগ নিয়ে দুনিয়ায় প্রথম বারের মত মূর্তি পুজার আবির্ভাব ঘটায়। শয়তান যেভাবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে একটা সুন্দর সমাজে ধীরে ধীরে মূর্তি পুজার মত জঘন্য পাপের বিস্তার ঘটায় তা এখানে সংক্ষেপে সহজ ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
সেই ভালো মানুষদের মৃত্যুর পর তাদের অনুসারিরা ব্যাথিত হৃদয় নিয়ে অনেক হা-হুতাশ করতেছিলো। তখন শয়তান মানুষের বেশে তাদের মাঝে উপস্থিত হলো এবং তাদেরকে এটা বোঝালো যে যদি তারা ঐ ব্যাক্তিদের মুর্তি বানায় তাহলে তারা এগুলোর দিকে তাকিয়ে অন্তরের শুন্যতা দূর করতে পারবে এবং এগুলো তাদের ভালো কাজের স্বীকৃতি হয়েও থাকবে আবার তোমরা ও এমন মহান সব কাজ করার অনুপ্রেরনা পাবে।তারপর তারা যে সব যায়গায় বসতো শয়তান সেই সব যায়গায় পাথর খোদাই করে সেই মানুষদের প্রতিচ্ছবি অঙ্কন করে দেয়। অনুসারীগন এগুলোর চারপাশে সমবেত হতো এবং তাদের স্মরন করতো। তারপর শয়তান তাদের বুঝালো যে তোমাদের ঘর, বাজার, মজলিস সব যায়গায় যদি এগুলো তৈরি করে দেই তাহলে তোমরা সব সময় তাদের কথা স্মরন করতে পারবে এবং শয়তান তাদের গৃহে, বাজারে ইত্যাদি বিভিন্ন যায়গায় এসকল ভাষ্কর্য তৈরি করে দিলো। তখন সে সকল অনুসারীরা সব যায়গায় ভাষ্কর্য দেখে সেই সকল মহান ব্যাক্তিদের কথা স্মরন করতো। শয়তান তখন মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রনা ঢোকাতে থাকে যাতে করে তারা এই সকল মুর্তির ইবাদত করে। কিন্তু পৃথীবিতে এর আগে কেউ কখনো মুর্তি পুজা করেনি তাই তাদের এই কুমন্ত্রনার জালে ফাসানো এতটা সহজ ছিলো না। কিন্তু অনেক দিন কেটে গেলে ধীরে ধীরে ঐ সকল অনুসারীগন ও মারা যাওয়ার পর সে সম্প্রদায়ের নতুন প্রজন্ম এসকল ভাষ্কর্য সম্পর্কে তেমন একটা মাথা ঘাটাতো না। তারা অতোটা সঠিক ভাবে জানতো ও না যে এগুলোর কাজ কি, কোথেকে এলো, কিভাবে এলো। এবং শয়তান এর মোক্ষম সুযোগ গ্রহন করলো। সে আবার মানুষ রুপে এসে সেই নতুন প্রজন্মকে জিজ্ঞেস করলো তোমরা কি এই ভাষ্কর্য সম্পর্কে জানো না। এগুলো হলো তোমাদের দেব দেবী। তোমাদের পূর্বপুরুষগন এদের ইবাদত করতো তোমরাও এগুলোর কাছে প্রার্থনা করো। তখন নতুন প্রজন্ম এগুলোর ইবাদত করা শুরু করলো এবং এগুলোর কাছে ফসল, বৃষ্টি ইতাদি প্রার্থনা করতো। এভাবেই দুনিয়ায় মুর্তি পুজা শুরু হয়। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বলেন, নৃহ (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের এ দেব-দেবীগুলো পরে আরব সহ বিভিন্ন যায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। ইকরিমা, যাহ্হাক, কাতাদা এবং মুহাম্মদ ইব্ন ইসহাক (রঃ) ও অনুরূপ মত প্রকাশ করেছেন ।
[তথ্যসূত্রঃ আল্লামা ইসমাইল ইবনে কাসির (রঃ) এর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে প্রায় এরকম উল্লেখ আছে এবং আংশিক পরিবর্তন সহ বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া যায়]