পথহারা সুন্দরি মেয়ে ও ইমানদার যুবকের গল্প

একজন সুন্দরি মেয়ে মরুভুমির মধ্যে চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে তার সাথিদের থেকে অনেক পেছনে পড়ে গেল। সাথিদের খুজতে খুজতে যখন সন্ধ্যা নেমে আসলো তখন সে বুঝতে পারলো যে সে পথ হারিয়ে ফেলেছে। সে চারিদিকে শুধু মরুভুমির বালি ছাড়া কিছুই দেখতে পেল না। চারিদিকে অন্ধকার হয়ে গেলে সে কিছু দূরে একটা আলো দেখতে পেল। সেখানে যেয়ে সে একটি ছোট ঘর দেখতে পেলো। ঘরের সামনে মেয়েটি গিয়ে কড়াঘাত করলে একজন অল্প বয়সের যুবক বেরিয়ে আসলো। অতঃপর মেয়েটি তার কাছে বললো, আমি মাদরাসায় থেকে বাড়ি যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে আমার সঙ্গিদের হারিয়ে পথ ভুলে এখানে এসেছি। আমাকে পথ দেখিয়ে দিলে কৃতার্থ হব।

যুবকটি কিছুক্ষন ভেবে হেসে দিয়ে বললো আপনার গন্তব্য এখানে থেকে অনেক দুরে। আপনি একেবারে পরিত্যক্ত এলাকায় এসেছেন। এই অন্ধকারে মরুভুমির মধ্যে পথ চিনে আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে না। আপনি বরং আজকের রাতটা আমার বাড়িতে থেকে যান। আগামীকাল আমি আপনাকে আপনার বাড়িতে পৌঁছে দিব। ঐ বাড়িতে একা যুবক ছাড়া আর কেউ ছিলো না। চারিপাশে মাইলের পর মাইল কোনো বাড়ি ঘর ও ছিলো না। রাতে যদি যুবকটি মেয়েটির কোনো ক্ষতি করে তাহলে তার সাহায্য পাওয়া তো দুরের কথা চিতকার শোনার মত ও কেউ নেই। তবুও মেয়েটির কাছে আর কোনো পথ খোলা ছিলো না। তাই মেয়েটি যুবকের বাড়িতেই রাত্রি যাপন করার সিদ্ধান্ত নিল। যুবক মেয়েটিকে বলল, আপনি আমার বিছানায় ঘুমান। আমি ঘরের অপর প্রান্তে মাটিতে ঘুমাব। তারপর যুবক চাদর দিয়ে ঘরের মাঝখানে তার এবং মেয়েটির মাঝখানে পর্দা করে দিলেন।

মেয়েটি অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পুরো শরীর আবৃত করে বিছানায় শুয়ে পড়লেন। শুধু চোখ দুটি খোলা রেখে তা দিয়ে যুবকের গতিবিধি পর্যবেক্ষনে রাখলেন। মেয়েটি আত্মরক্ষার স্বার্থে রাতে না ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। মেয়েটি ভাললো যুবকটি ঘুমিয়ে পড়লে তারপর সে ঘুমাবে। কিন্তু যুবকটি কিছুতেই ঘুমাচ্ছিলো না। মেয়েটি দেখলেন, যুবকটি মোমবাতি জালিয়ে একটি বই পড়ছেন।হঠাৎ বইটি বন্ধ করে দিলেন। এবং নিজের একটি আঙ্গুল মোমবাতির আগুনে প্রায় ৫ মিনিট ধরে রাখলেন! এভাবে তার সব আঙ্গুলই পোড়াচ্ছিলেন! এটা দেখে মেয়েটি আরো বেশি ভীত বিহবল হড়ে পড়লেন! কোন জীনের কবলে পড়ল কি না, এই সংশয়ে তার কান্না চলে আসলো। কিন্তু তার আক্রমনের ভয়ে জোরে কাঁদতে পারছে না। এভাবে তারা দুজনেই সারারাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলো।

অতঃপর সকালে যুবকটি মেয়েটিকে তার বাড়িতে পৌঁছে দিল। মেয়েটি বাড়িতে গিয়ে তার রাতের ঘটনা খুলে বলল। কিন্তু তার বাবা ঘটনাটি বিশ্বাস করতে পারছিল না। তিনি কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। ফলে তিনি তার মেয়ের কাছ থেকে বর্ননা শুনে খোজা খুজি করে পথিক বেশে যুবকের বাসায় এসে রাস্তা ভুলে যাওয়ার কথা বলে সাহায্য চাইলেন। অতঃপর তিনি দেখলেন, সত্যিই যুবকটির হাতের আঙ্গুলগুলো বাধা ছিল। তিনি এগুলি পুড়ে যাওয়ার কারন জিজ্ঞেস করলে, যুবক জবাবে বলেন, গতরাতে আমার বাড়িতে এক সুন্দরী মেয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। একই ঘরে মেয়েটি আমার বিছানায় ঘুমানোর পর শয়তান আমার মনে কুমন্ত্রণা দিতে থাকে। ফলে পাপের পরিণাম জাহান্নামের আগুনের বিষয়টি অন্তরে স্বরণ রাখতে আমি আগুনে আঙ্গুল পুড়িয়েছি। আল্লাহর কসম, শয়তানের কুমন্ত্রণাটি যেন আগুনে আঙ্গুল পুড়ানোর চেয়েও শক্তিশালী ছিল। আল্লাহ শেষ পর্যন্ত আমাকে সাহায্য করেছেন।

ঘটনা শুনে মেয়ের বাবা তার বাড়িতে যুবককে আমন্ত্রন জানালেন। যুবকের সততায় মুগ্ধ হয়ে তার ঐ সুন্দরী মেয়েকে যুবকের সাথে বিবাহ দিলেন। ফলে আল্লাহর ভয়ে একরাত্রের উপভোগ বিসর্জন দেওয়ায়, আল্লাহ তায়ালা বিনিময়ে তার পুরো জীবন উপভোগ দ্বারা ভরে দিলেন।

সত্যিই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোন কিছু পরিত্যাগ করলে, আল্লাহ তায়ালা বিনিময়ে তার চেয়েও উৎকৃষ্টতর জিনিস দান করেন।

[বিঃদ্রঃ ঘটনাটি ইন্টারনেট এ বিভিন্ন যায়গায় একটু আধটু পরিবর্তন সহ উল্লেখ আছে এবং লোকমুখে প্রচলন আছে তবে ঘটনার সত্যতা সম্মন্ধে লেখক অবগত নয়]

Leave a Reply

Your email address will not be published.